দুই হাজারেরও বেশি কর্মী নেবে গ্রামীণ ব্যাংক

দুই হাজারেরও বেশি কর্মী নেবে গ্রামীণ ব্যাংক

দুই হাজারেরও বেশি কর্মী নেবে গ্রামীণ ব্যাংক ২০২১ ও ২০২২ সালে দুই হাজারেরও বেশি কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে নোবেলজয়ী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের। অভিজ্ঞতা ছাড়াই চাকরি হয় বিশেষায়িত এই ব্যাংকে। নিয়োগের প্রক্রিয়া, নতুনদের চাকরির সুযোগ, কাজের চ্যালেঞ্জসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জাহাঙ্গীর হোসেন হাওলাদার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাবিব তারেক

আমাদের এখানে চাকরি পাওয়া সহজ, তবে টিকে থাকা কঠিন। কারণ নতুন চাকরি পাওয়া থেকে শুরু করে পুরো চাকরিজীবনে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হয়

বর্তমানে সারা দেশে গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মিসংখ্যা কত? কাছাকাছি সময়ে জনবল নিয়োগের কোনো পরিকল্পনা আছে আপনাদের?

সারা দেশে বর্তমানে গ্রামীণ ব্যাংকের স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা ১৮ হাজার আর আউটসোর্সিং ও দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করা কর্মীর সংখ্যা তিন হাজার। এ ছাড়া সদস্য সংখ্যা প্রায় ৯৩.৩০ লাখ। প্রতিবছরই কর্মী নিয়োগ ও নতুন নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে দুই হাজার করে মোট চার হাজার প্রার্থীর বাছাই পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।

চলতি বছরে (অক্টোবর পর্যন্ত) ৭১৮ জন (নন-অফিসার ৬৯৮ ও অফিসার ১২০ জন) নতুন কর্মী নিয়োগের পাশাপাশি ৬.৮০ লাখ নতুন সদস্য নেওয়া হয়েছে। ২০২১ ও ২০২২ সালে সব মিলিয়ে দুই হাজারেরও বেশি কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা গ্রামীণ ব্যাংকের। এ ছাড়া অক্টোবর (২০২১) পর্যন্ত ৯৩.৩০ লাখ সদস্যকে ঋণ বিতরণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে গ্রামীণ ব্যাংক।

নিয়োগের ক্ষেত্রে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া থেকে শুরু করে প্রার্থীদের শর্টলিস্ট, বাছাই পরীক্ষা ও নিয়োগ পর্যন্ত কী কী ধাপ সম্পন্ন করা হয়?

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর নির্ধারিত সময় পর্যন্ত ডাকযোগে প্রার্থীদের আবেদন নেওয়া হয়। সর্বশেষ দেওয়া ‘প্রবেশনারি অফিসার’ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে অনলাইনে আবেদন নেওয়া হয়েছিল। আবেদনের পর প্রার্থীদের একাডেমিক ফলাফলের ভিত্তিতে শর্টলিস্ট করে নির্দিষ্টসংখ্যক প্রার্থীকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য ডাকা হয়। সাধারণত কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর লক্ষাধিক প্রার্থী সেখানে আবেদন করেন। ১০০ নম্বরের লিখিত ও ৫০ নম্বরের ভাইভা পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থীদের নির্বাচন করা হয়।

নির্বাচিতদের দুই-তিন দিন ঢাকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রাখার পর ফিল্ডে পাঠানো হয়। ফিল্ডে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি কর্মীদের সংশ্লিষ্ট কাজে দক্ষ হয়ে ওঠার জন্য  যাবতীয় সহযোগিতা করা হয়। কেউ প্রশিক্ষণকালীন অবস্থায় চাকরি ছেড়ে দিলে অপেক্ষমান তালিকার প্রার্থীকে নিয়ে শুন্যস্থান পুরণ করা হয়। 

প্রবেশনারি অফিসার পদে নিয়োগের পর এক বছর সফল প্রশিক্ষণ শেষে তাঁদের ‘সিনিয়র অফিসার’ পদে স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়।

নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীর কোন বিষয়গুলো আপনারা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন। ভাইভায় সাধারণত কোন প্রশ্নগুলো বেশি জিজ্ঞেস করা হয়?

ভাইভার সময় প্রার্থীর ফিটনেসের ব্যাপারটা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। কারণ ফিটনেস ভালো থাকলেই প্রার্থী কর্মঠ হবেন! যেকোনো জায়গায় কাজ করার মানসিকতা আছে কি না, দুর্গম গ্রাম বা প্রান্তিক স্তরের সাধারণ অসচ্ছল মানুষের সঙ্গে মানিয়ে কাজ করতে পারবেন কি না, সেটাও বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে যাচাই করা হয়।

কোন কোন বিভাগে সাধারণত বেশিসংখ্যক জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়?

ব্যাংকিং হিসাব-নিকাশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাধারণ কার্যক্রমের জন্য অফিসার ও কেন্দ্র ব্যবস্থাপক পদে বেশি নিয়োগ দেওয়া হয়।

তবে কম সংখ্যায় হলেও টেকনিক্যাল খাতেও (যেমন আইটি সেক্টর, নির্মাণ শাখার জন্য ইঞ্জিনিয়ার) নিয়োগ দেওয়া হয়। বর্তমানে আইটি বিভাগের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি।

আপনাদের প্রতিষ্ঠানে চাকরির ক্ষেত্রে ফ্রেশার বা অনভিজ্ঞদের সুযোগ কেমন? নতুনদের কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়?

এখানে চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে কোনো অভিজ্ঞতা চাওয়া হয় না। সাধারণত ফ্রেশারদেরই নিয়োগ দেওয়া হয়। গ্রামীন ব্যাংকে চাকরি পাওয়া সহজ, তবে টিকে থাকা কঠিন। কারণ নতুন চাকরি পাওয়া থেকে শুরু করে পুরো চাকরিজীবনে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হয়।

আমাদের মূল কার্যক্রম প্রত্যন্ত গ্রামে, যেখানে শহরের মতো সুযোগ-সুবিধা নেই। তাই প্রার্থীদের অনেকেই শুরুতে একরকম ধাক্কা খান। কেউ কেউ প্রবেশনারি বা শিক্ষানবিশ সময়কালেই চাকরি ছেড়ে দেন। সদ্য নিয়োগপ্রাপ্তদের মনোবল বাড়াতে আমাদের কর্মীরা শুরুর দিকে কাউন্সেলিং করেন।  

চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার ধরন ও পদ্ধতি কেমন? নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের তদারকির মাধ্যমে হয়, নাকি স্থানীয় দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তদারকির মাধ্যমে পরিচালিত হয়?

গ্রামীণ ব্যাংকের নিজস্ব আয়োজনে প্রথমে ১০০ নম্বরের লিখিত, পরে ৫০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়।

মান বণ্টন :

ক. লিখিত (পূর্ণমান-১০০)        

♦ বহু নির্বাচনী প্রশ্ন (৩০টি, মান-৩০) ইংরেজি ১০+ গণিত ১০+ সাধারণ জ্ঞান ১০।

♦ অ্যানালিটিক্যাল অ্যাবিলিটি সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন (৫টি, মান ১০)।

♦ রচনামূলক প্রশ্ন (৫টি, মান ৬০)।

খ. মৌখিক (মান-৫০)

লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ৫০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে থেকে সর্বোচ্চ মেধার ভিত্তিতে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়।

লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি বোর্ড/কমিটি গঠন করা হয়। এ বোর্ডের অধীনে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। টেকনিক্যাল বিষয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে লিখিত ও মৌখিকের পাশাপাশি ব্যাবহারিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করা হয়।

কর্মী ছাঁটাইয়ে আপনাদের স্ট্র্যাটেজি কী?

অহেতুক কর্মী ছাঁটাইকে আমরা সমর্থন করি না। তবে প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপে কেউ লিপ্ত হলে প্রতিষ্ঠানিক নিয়মানুযায়ী চাকরিচ্যুত হতে পারেন।

কেন একজন প্রার্থী আপনাদের প্রতিষ্ঠানে চাকরির আগ্রহ দেখাবেন?

গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে পরিচালিত বিষেশায়িত ব্যাংক ও নোবেল বিজয়ী প্রতিষ্ঠান। এখানে নিয়ম-শৃঙ্খলার দিকে খুব জোর দেওয়া হয়। প্রত্যেক কর্মীর পারসোনাল ফাইল নিয়মিত আপডেট করা হয়।

লাঞ্চ ভাতা, বোনাস, বৈশাখী ভাতা, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, পদোন্নতি ও পেনশন সুবিধা থাকায় যেকোনো প্রার্থীই গ্রামীণ ব্যাংকে চাকরি করতে আগ্রহী হবেন।

বিশ্বব্যাপী আমাদের ব্যাংকের পরিচিতি ও সুনাম আছে।

আমেরিকা, কানাডা, ইতালি, ভারতসহ ১০৬টি দেশ থেকে এ পর্যন্ত ৬ হাজার ৮২৬ জন  ব্যক্তি গ্রামীণ ব্যাংকের ওপর ইন্টার্নশিপ করতে এখানে এসেছেন।

Check Also

আরডিআরএস বাংলাদেশ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২৩ | RDRS Bangladesh Job Circular

আরডিআরএস বাংলাদেশ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২৩ঃ আরডিআরএস বাংলাদেশ-এর ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে (এমআরএ নিবন্ধন নম্বর: ০০১৪৩-১৭৫-০০১৯২) নিম্নলিখিত পদে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.