মীর মশাররফ হোসেন

মীর মশাররফ হোসেন

⏺️জন্ম
সৈয়দ মীর মশাররফ হোসেন
১৮৪৭ কুষ্টিয়া (বর্তমান বাংলাদেশ)

⏺️মৃত্যু
১৯ ডিসেম্বর ১৯১১ পদমদী, রাজবাড়ী

➡️সৈয়দ মীর মশাররফ হোসেন ছিলেন একজন বাঙালি ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক। তিনি বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান গদ্যশিল্পী ও বাঙালি মুসলমান সাহিত্যিকদের পথিকৃৎ।
➡️ কারবালার যুদ্ধকে উপজীব্য করে রচিত বিষাদ সিন্ধু তার সবচেয়ে জনপ্রিয় সাহিত্যকর্ম।
এছাড়াও–

১. রত্নবতী (উপঃ ১৮৬৯)
২. বসন্ত কুমারী (নাটক ১৮৭৩)
৩. জমিদার দর্পণ (নাটক ১৮৭৩)
৪. গড়াই ব্রীজ বা গৌড়ী সেতু (কবিতা গ্রন্থ ১৮৭৩)
৫. এর উপায় কি (প্রহসন ১৮৭৩)
৬. বিষাদ-সিন্ধু (ঐতিহাসিক উপন্যাস ১৮৮৫-৯১)
৭. সঙ্গীত লহরী (১৮৮৭)
৮. গো-জীবন (প্রবন্ধ ১৮৮৯)
৯. বেহুলা গীতাভিনয় (গীতিনাট্য ১৮৮৯)
১০. উদাসীন পথিকের মনের কথা (জীবনী ১৮৯০)
১১. গাজী মিয়ার বস্তানী (রম্যরচনা ১৮৯৯)
১২. মৌলুদ শরীফ (গদ্যে-পদ্যে লিখিত ধর্মীয় গ্রন্থ ১৯০৩)
১৩. মুসলমানের বাঙ্গালা শিক্ষা (ছাত্র পাঠ্য ১ম ভাগ ১৯০৩ এবং দিত্বীয় ভাগ ১৯০৮)
১৪. বিবি খোদেজার বিবাহ (কাব্য ১৯০৫)
১৫. হযরত ওমরের ধর্ম জীবন লাভ (কাব্য ১৯০৫)
১৬. হযরত বেলালের জীবনী (প্রবন্ধ ১৯০৫)
১৭. হযরত আমীর হামজার ধর্ম জীবন লাভ (কাব্য ১৯০৫)
১৮. মদিনার গৌরব (কাব্য ১৯০৬)
১৯. মোশ্লেম বীরত্ব (কাব্য ১৯০৭)
২০. এসলামের জয় (প্রবন্ধ গ্রন্থ ১৯০৮)
২১. আমার জীবনী (আত্মজীবনী ১৯০৮-১০)
২২. বাজীমাত (কাব্য ১৯০৮)
২৩. হযরত ইউসোফ (প্রবন্ধ গ্রন্থ ১৯০৮)
২৪. খোতবা বা ঈদুল ফিতর (কাব্য ১৯০৯)
২৫. বিবি কুলসুম (জীবনী ১৯১০)

➡️উপরোক্ত গ্রন্থসমূহ বাদে মীর মশাররফ হোসেন লিখিত অপর ১২ খানি গ্রন্থের নাম পাওয়া যায়।
এই গ্রন্থগুলো হলঃ
২৬. ভাই ভাই এইত চাই (প্রহসন ১৮৯৯)
২৭. ফাঁস কাগজ (প্রহসন ১৮৯৯)
২৮. এ কি! (প্রহসন ১৮৯৯)
২৯. টালা অবিনয় (প্রহসন ১৮৯৯)
৩০. পঞ্চনারী (কাব্য)
৩১. প্রেম পারিজাত (কাব্য)
৩২. বাঁধাখাতা (উপঃ ১৮৯৯)
৩৩. নিয়তি কি অবনতি (উপঃ ১৮৯৯)
৩৪. রাজিয়া খাতুন (উপঃ ১৮৯৯)
৩৫. তহমিনা (উপঃ ১৮৯৯)
৩৬. গাজী মিয়ার গুলি (রম্যরচনা)
৩৭. বৃহত হীরক খনি (শিশু পাঠ)

⏺️প্রহসনঃ
➡️মনে রাখার কৌশলঃ (ভাইয়ে ভাইয়ে ফাঁস কাগজে একি করল ? এর উপায় কি?)

👉ভাই ভাই এই তো চাই
👉একি
👉এর উপায় কি
👉ফাঁস কাগজ

⏺️নাটকঃ
➡️মনে রাখার কৌশলঃ (বেটা বসন্ত জমিদার)

👉বে – বেহুলা গীতাভিনয়
👉টা- টালা অভিনয়
👉বসন্ত – বসন্ত কুমারী
👉জমিদার – জমিদার দর্পন

⏺️উপন্যাস:
➡️মনে রাখার কৌশলঃ (রত্নাবতী বিষাদসিন্ধুর পানে তাকিয়ে থাকা উদাসীন পথিকের মনের কথা বুঝতে পেরে বাঁধা খাতাটি গাজী মিয়ার বস্তানীতে রাখলেন)

👉রত্নাবতী – বাংলা সাহিত্যের মুসলমান রচিত ১ম উপন্যাস

👉বিষাদসিন্ধু
👉গাজীমিয়ার বস্তানী
👉বাঁধা খাতা
👉উদাসীন পথিকের মনের কথা

গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন

➡️বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম ঔপন্যাসিকের নাম কী?
➖ মীর মশাররফ হােসেন।

➡️বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম নাট্যকারের নাম কী?
➖মীর মশাররফ হােসেন।

➡️বাংলা সাহিত্যের প্রথম উল্লেখযােগ্য মুসলিম সাহিত্যিক বা গদ্য লেখকের নাম কী?
➖মীর মশাররফ হােসেন।

➡️উপন্যাস: ‘রত্নবতী মীর মশাররফ হােসেনের প্রকাশিত প্রথম গ্রন্থ। এটি বাংলা সাহিত্যে মুসলিম সাহিত্যিক কর্তৃক রচিত প্রথম উপন্যাস।

➡️’বিষাদসিন্ধু ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাসটি লেখকের শ্রেষ্ঠ রচনা। উপন্যাসটি ৩টি পর্বে বিভক্ত। কারবালার ঘটনার মর্মস্পর্শী বর্ণনা এর মূল উপজীব্য। উপন্যাসের নায়ক ইমাম হােসেন।

➡️গাজী মিয়ার বস্তানী লেখকের আত্মজীবনীমূলক ব্যঙ্গরসাত্মক উপন্যাস।

➡️উদাসীন পথিকের মনের কথা এটি আত্মজীবনীমূলক একটি উপন্যাস। নীলকর অত্যাচারের কাহিনি এতে সুন্দরভাবে রূপায়ণ করা হয়েছে।

➡️ নাটক: ‘বসন্তকুমারী মীর মশাররফ হােসেনের প্রকাশিত প্রথম নাটক। এটি বাংলা সাহিত্যে মুসলিম সাহিত্যক কর্তৃক রচিত প্রথম নাটক। নাটকটি তিনি নওয়াব আব্দুল লতিফকে উৎসর্গ করেন।

➡️মীর মশাররফ হােসেনের ‘জমিদার দর্পণ’ নাটকের নামকরণে দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’ নাটকের প্রভাব রয়েছে।

➡️মীর মশাররফ হােসেনের অন্যান্য নাটকের নাম কী?
➖ বেহুলা গীতাভিনয়, টালা অভিনয়।

➡️আত্মজীবনী: আমার জীবনী, বিবি কুলসুম।

➡️ কাব্যগ্রন্থ: মােসলেম বীরত্ব।

➡️ প্রবন্ধ: গােজীবন। এই গ্রন্থ রচনার কারণে তাঁকে মামলায় জড়িয়ে পড়তে হয়।

➡️প্রহসন: ‘এর উপায় কি?’ বাংলা সাহিত্যে মুসলিম সাহিত্যক কর্তৃক রচিত প্রথম প্রহসন।

⏺️বিস্তারিত আলোচনা

মীর মশাররফ হোসেন (১৮৪৭-১৯১২) মূলত ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক।
১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলার লাহিনীপাড়ায় তার জম্ন।
পিতা মীর মোয়াজ্জেম হোসেন ছিলেন জমিদার। নিজ বাড়িতে মুনশির নিকট আরবি ও ফারসি শেখার মাধ্যমে তার লেখাপড়ার  হাতেখড়ি। পরে পাঠশালায় গিয়ে তিনি বাংলা ভাষা শেখেন।
তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় কুষ্টিয়া স্কুলে।
পরে তিনি কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করে কলকাতার কালীঘাট স্কুলে ভর্তি হন; কিন্তু লেখাপড়া আর বেশি দূর অগ্রসর হয়নি। কর্মজীবনের শুরুতে মশাররফ হোসেন পিতার জমিদারি দেখাশুনা করেন।
পরে তিনি ফরিদপুর নবাব এস্টেটে চাকরি নেন এবং ১৮৮৫ সালে দেলদুয়ার এস্টেটের ব্যবস্থাপক হন। এক সময় এ চাকরি ছেড়ে তিনি লাহিনীপাড়ায় প্রত্যাবর্তন করেন এবং পরে ভাগ্যান্বেষণে কলকাতায় গিয়ে ১৯০৩-০৯ পর্যন্ত অবস্থান করেন।

তিনি প্রথম জীবনে কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ (১৮৬৩) ও কবি ঈশ্বরগুপ্তের ‘সংবাদ প্রভাকর’ (১৮৩১) পতিকায় টুকিটাকি সংবাদ প্রেরণ করতেন। এই সুবাদে কাঙাল হরিনাথের সঙ্গে তার হৃদ্যতা গড়ে উঠেছিল যা আমৃত্যু বহাল থাকে। এ কারণেই তাকে কাঙাল হরিনাথের সাহিত্যশিষ্য বলা হয়।
১৮৯০ সালে তিনি পুনরায় লাহিনীপাড়া থেকে ‘হিতকরী’ নামে একখানি পাক্ষিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। এ পত্রিকার কোথাও সম্পাদকের নাম ছিল না। ‘হিতকরীর’ কয়েকটি সংখ্যা টাঙ্গাইল থেকেও প্রকাশিত হয়েছিল। এ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক ছিলেন কুষ্টিয়ার বিখ্যাত উকিল রাইচরণ দাস। সাংবাদিকতা তার জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। আর এ কারণে তিনি সৃজনশীল লেখালেখিতে মনোযোগ দেন।

মশাররফ আজিজননেহার (১৮৭৪) ও হিতকরী (১৮৯০) নামে দুটি পত্রিকাও সম্পাদনা করেন।
মীর মোশাররফ ছিলেন বঙ্কিমযুগের অন্যতম প্রধান গদ্যশিল্পী ও উনিশ শতকের বাঙালি মুসলমান সাহিত্যিকদের পথিকৃৎ।
তিনি তার বহুমুখী প্রতিভার মাধ্যমে উপন্যাস, নাটক, প্রহসন, কাব্য ও প্রবন্ধ রচনা করে আধুনিক যুগে মুসলিম রচিত বাংলা সাহিত্যে সমৃদ্ধ ধারার প্রবর্তন করেন। সাহিত্যরস সমৃদ্ধ গ্রন্থ রচনায় তিনি বিশেষ কৃতিত্ব দেখান।
কারবালার বিষাদময় ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘বিষাদ সিন্ধু’ তার শ্রেষ্ঠ রচনা। তার সৃষ্টিকর্ম বাংলার মুসলমান সমাজে আধুনিক সাহিত্য ধারার সূচনা করে। মুসলিম সাহিত্যিকদের পথিকৃৎ মীর মশাররফ হোসেন বিশুদ্ধ বাংলায় অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করে আরবি-ফারসি মিশ্রিত তথাকথিত মুসলমানী বাংলা ভাষা পরিত্যাগ করেছিলেন। তার ‘বিষাদ সিন্ধু’ বাংলার মুসলমান সমাজে ধর্মগ্রন্থের মতো শ্রদ্ধার সঙ্গে আজও পঠিত হয়। কারবালার করুণ ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে রচিত এই উপন্যাসখানি বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। তার অপর গ্রন্থগুলো বাদ দিলেও মাত্র এই একখানি গ্রন্থ রচনার জন্য তাকে বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ লেখক আখ্যায়িত করা যায়।

বঙ্কিমচন্দ্রের দুর্গেশনন্দিনী (১৮৬৫) উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার চার বছর পর মশাররফের প্রথম উপন্যাস রত্নবতী (১৮৬৯) প্রকাশিত হয়।
এরপর তিনি একে একে কবিতা, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, আত্মজীবনী, পাঠ্যপুস্তক ইত্যাদি বিষয়ে বহু গ্রন্থ রচনা করেন।
মীর মশাররফ হোসেনের মোট ৩৬টি বইয়ের সন্ধান পাওয়া যায়;
তার রচনা হলো : গোরাই-ব্রিজ অথবা গৌরী-সেতু (১৮৭৩), বসন্তকুমারী নাটক (১৮৭৩), জমিদার দর্পণ (১৮৭৩), এর উপায় কি (১৮৭৫), বিষাদ-সিন্ধু (১৮৮৫-১৮৯১), সঙ্গীত লহরী (১৮৮৭), গো-জীবন (১৮৮৯), বেহুলা গীতাভিনয় (১৮৯৮), উদাসীন পথিকের মনের কথা (১৮৯০), তহমিনা (১৮৯৭), টালা অভিনয় (১৮৯৭), নিয়তি কি অবনতি (১৮৮৯), গাজী মিয়ার বস্তানী (১৮৯৯), মৌলুদ শরীফ  (১৯০৩), মুসলমানদের বাঙ্গালা শিক্ষা (দুই ভাগ ১৯০৩, ১৯০৮), বিবি খোদেজার বিবাহ (১৯০৫), হজরত ওমরের ধর্মজীবন লাভ (১৯০৫), মদিনার গৌরব (১৯০৬), বাজীমাৎ (১৯০৮), আমার জীবনী (১৯০৮-১৯১০), আমার জীবনীর জীবনী বিবি কুলসুম (১৯১০) ইত্যাদি।
তার অমর কীর্তি বিষাদ সিন্ধু উপন্যাসে কারবালার বিষাদময় ঐতিহাসিক কাহিনী বিবৃত হয়েছে। তবে অনেক ঘটনা ও চরিত্র সৃষ্টিতে উপন্যাসসুলভ কল্পনার আশ্রয়ও নেওয়া হয়েছে।
তার জমিদার দর্পণ নাটকটি ১৮৭২-৭৩ সালে সিরাজগঞ্জে সংঘটিত কৃষক-বিদ্রোহের পটভূমিকায় রচিত। তার গতিশীল গদ্য রচনায় সিদ্ধহস্ত ছিলেন। নাটক ও আত্মজৈবনিক উপন্যাসগুলোতে তিনি সমকালীন সমাজের অসঙ্গতি ও সমস্যার ওপর তীক্ষ  কটাক্ষপাত করেন। তিনি সাম্প্রদায়িক মনোভাব থেকে মুক্ত ছিলেন।
উদার দৃষ্টিকোণ থেকে ‘গোকুল নির্মূল আশঙ্কা’ প্রবন্ধ লিখে তিনি স্বসমাজ কর্তৃক নিগৃহীত হন। তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
মাত্র আঠার বছর বয়সে তার পিতৃবন্ধুর কন্যা আজিজুন্নেসার সঙ্গে বিয়ে হয়। প্রথম স্ত্রী আজিজুন্নেসার গর্ভে কোনো সন্তান জম্নগ্রহণ করেনি। তার পাঁচটি পুত্র ও ছয়টি কন্যা সবাই বিবি কুলসুমের গর্ভজাত।
১৯১২ সালের ১৯ (বাংলাপিডিয়া) ডিসেম্বর নিজ বাড়ি রাজবাড়ী জেলার পদমদী গ্রামে মীর মশাররফ হোসেন মারা গেলে বিবি কুলসুমের কবরের পাশেই তাকে সমাহিত করা হয়।
➡️ সংকলন-মোস্তাফিজার মোস্তাক

Check Also

বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত উক্তি ও প্রবক্তা

বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত উক্তি ও প্রবক্তা 📒রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১। ‘আজি হতে শত বর্ষে পরে কে …