বিশ্বের প্রাচীন সভ্যতা
মেসােপটেমীয় সভ্যতা :
পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতা হলাে মেসােপটেমীয় সভ্যতা।
এটি পৃথিবীর প্রথম সভ্যতা ও বটে।
গ্রিক ভাষায় মেসােপটেমীয়া শব্দের অর্থ- ‘দুই নদীর মধ্যবর্তী।
আর প্রাচীন গ্রিক শব্দ অনুযায়ী এই সভ্যতার নামকরণ করা মেসােপটেমীয়া।
মেসােপটেমীয় সভ্যতা টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস তথা দজলা ও ফোরাত নদীর তীরে গড়ে ওঠেছিল।
মেসােপটেমীয়া সভ্যতার অধিকাংশ বর্তমানে ইরাকে অবস্থিত এবং এর কিছু অংশ সিরিয়ায় পড়েছে।
মেসােপটেমীয় সভ্যতা মূলত ৪টি সভ্যতার সমষ্টি :
(১) সুমেরীয় সভ্যতা
(২) ব্যাবিলনীয় সভ্যতা
(৩) অ্যাশেরীয় সভ্যতা
(৪) ক্যালডীয় সভ্যতা।
মেসােপটেমীয়া সভ্যতার এই ৪টি সভ্যতার মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতা হলাে সুমেরীয় সভ্যতা।
(১) সুমেরীয় সভ্যতার অবদান :
– সভ্যতায় সমেরীয়দের সবচেয়ে বড় অবদান: ‘কিউনিফর্ম লিখন পদ্ধতির উদ্ভাবন।
– অবস্থান: ইরাকে
(২) ব্যাবিলনীয় সভ্যতার অবদানঃ
– সভ্যতায় ব্যবিলনীয়দের সবচেয়ে বড় অবদান: পৃথিবীর প্রথম লিখিত আইনের প্রচলন
– সর্বপ্রথম পঞ্জিকার প্রচলন
– অবস্থান: ইরাকে
(৩) অ্যাশেরীয় সভ্যতার অবদানঃ
– সবচেয়ে বড় অবদান: যুদ্ধবিদ্যা (সমরবিদ্যা) ও সমরাস্ত্রের ব্যবহার
– পৃথিবীকে অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশে ভাগ করে
– পৃথিবীকে ৩৬০ ডিগ্রিতে ভাগ করে
– অবস্থান: ইরাকে
(৪) ক্যালডীয় সভ্যতাঃ
– এটা পৃথিবীর নতুন সভ্যতা” নামে পরিচিত। এর স্থপতি হলেন নেবুচাঁদনেজার।
– ক্যালডীয় সভ্যতার অবদানঃ
– সভ্যতায় ক্যালডীয়দের সবচেয়ে বড় অবদান: ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান’ নির্মাণ (এটি বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের একটি)
– দিনকে ১২ জোড়া ঘণ্টায় ভাগ করেন। অর্থাৎ, ১দিনকে ২৪ ঘণ্টায় ভাগ করে।
– সপ্তাহকে ৭দিনে ভাগ
– অবস্থান: ইরাকে
মিশরীয় সভ্যতাঃ
– মিসরের নীল নদের তীরে খ্রিস্টপূর্বে ৫০০০ অব্দে মিশরীয় সভ্যতার গােড়াপত্তন হয়।
ঐতিহাসিক হেরােডােটাস মিসরকে ‘নীলনদের দান বলে অভিহিত করেছেন।
প্রাচীন মিশরে ৩ ধরনের লিপি প্রচলিত ছিল হায়ারােগ্লিফিক, হায়ারাটিক ও ডেমােটিক।
গ্রিক ‘হায়ারােগ্লিফিক শব্দের অর্থ-‘উৎকীর্ণ পবিত্র চিহ্ন’। এটি একধরনের চিত্রলিপি।
অন্যদিকে ক্যালিগ্রাফি’ হলাে স্টাইলিশ লিখন পদ্ধতি,
‘প্যাপিরাস হলাে প্রাচীন মিশরীয় লেখন পদ্ধতিতে ব্যবহৃত পেপার বা কাগজ।
ওডিসি’ হলাে গ্রীক কবি হােমারের মহাকাব্য।
মিশরীয় সভ্যতার অবদানঃ
– সভ্যতায় মিসরীয়দের সবচেয়ে বড় অবদান- কৃষি ক্ষেত্রে
– ৩০ দিনে ১ মাস
– ১২ মাসে ১ বছর
– ৩৬৫ দিনে বছর
– গণিতশাস্ত্রের দুটি শাখা জ্যামিতি ও পাটিগণিতের প্রচলন
– হায়রােগ্রাফিক বর্ণ বা চিত্রভিত্তিক লিপি
– প্যাপিরাস গাছের তৈরি কাগজ
– স্বিংস/মেস্কিংস(মূর্তি)
ফিনিশীয় সভ্যতাঃ
– বর্তমান লেবানন ও ভূ-মধ্যসাগরের মাঝামাঝি অঞ্চলে ফিনিশীয় সভ্যতা গড়ে ওঠেছিল।
– সভ্যতায় ফিনিশীয়দের সবচেয়ে বড় অবদান:
-২২টি ব্যঞ্জনবর্ণ বিশিষ্ট বর্ণমালার উদ্ভাবন তথা লিখন পদ্ধতির আবিষ্কার
পারস্য সভ্যতার অবদানঃ
– সভ্যতায় পারস্যদের সবচেয়ে বড় অবদানঃ
– ধর্ম সংস্কার ।
– পারস্যের ধর্মের নামঃ জরথ্রুস্টবাদ।
– জরথ্রুস্ট ছিলেন- পারস্যের একজন বিখ্যাত ধর্মগুরু ও দার্শনিক।
– দারিয়ুস’ ছিলেন- পারস্যের বিখ্যাত সম্রাট
– অবস্থান: ইরানে
হিব্রু সভ্যতাঃ
– ‘হিব্রু মূলত একটি ভাষার নাম।
– আজকের ফিলিস্তিনের জেরুজালেম শহরকে কেন্দ্র করে এই সভ্যতা গড়ে ওঠেছিল।
– হিব্রু শব্দের অর্থ- ‘নিচু বংশের লােক’ বা ‘যাযাবর’। এই হিব্রু জাতি বর্তমানে ইসরাইলে বাস করে।
– হিব্রুদের আদিনিবাস ছিল আরব মরুভূমিতে যাযাবর হিসেবে।
– হিব্রুরা ইহুদি ধর্মাবলম্বী।
– সভ্যতায় হিব্রুদের সবচেয়ে বড় অবদানঃ ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে
– অবস্থান: ফিলিস্তিন
সিন্ধু সভ্যতাঃ
সিন্ধু নদীর তীরে পাকিস্তানের মহেঞ্জোদারাে ও হরপ্পাতে এই সভ্যতা গড়ে ওঠেছিল।
এই ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতা। সিন্ধু সভ্যতা গড়ে তুলেছিল দ্রাবিড় জাতি।
১৯২২ সালে রাখাল দাস বন্দ্যোপাধ্যায়, দয়ারাম সাহনী এবং জন মার্শাল সিন্ধু সভ্যতা আবিষ্কার করেন।
সিন্ধু সভ্যতা আবিষ্কারের ফলে তা যুগের মহেঞ্জোদারাে ও হরপ্পা নামের দুটি প্রাচীন নগরীর সন্ধান পাওয়া যায়।
সিন্ধু সভ্যতার অর্থনীতি ছিল কৃষি নির্ভর ।
সিন্ধু সভ্যতায় পাওয়া যায়- বাটখারা, স্কেল, সিলমােহর ও পরিকল্পিত শহর।
এই সিন্ধু সভ্যতায় সর্বপ্রথম ওজন পরিমাপের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিল।
সিন্ধু সভ্যতার প্রায় সাড়ে চার হাজার বছরের পুরানাে একটি শহরের নাম মহেঞ্জোদারাে।
মহেঙ্জোদারাে শব্দটির ইংরেজি হলাে- ‘Mound of the dead’; যার বাংলা অর্থ হলাে- ‘মরা মানুষের টিবি’ বা ‘মৃত্যু স্তুপ’ ।
তাই মহেঞ্জোদারােকে ‘মৃতের স্তুপ’ নামেও ডাকা হয়। ১৯২২ সালে মহেঞ্জোদারাে আবিষ্কৃত হলে সেখানে গােসলখানা পাওয়া যায়।
“মহেঞ্জোদারাে’ এবং ‘হরপ্পা’ নগরী ছিল সিন্ধু সভ্যতার বৃহত্তম দুটি শহর।
সিন্ধু সভ্যতার সবচেয়ে বড় অবদানঃ
পরিকল্পিত নগর ব্যবস্থার উদ্ভাবন।