বাংলাদেশের সংবিধানের ৭টি তফসিল
প্রশ্ন: সংবিধানের তফসিল বলতে কী বােঝায়?
উঃ সংবিধানের বিশেষ কোনাে অনুচ্ছেদের বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বর্ণনাকে বােঝায়। অর্থাৎ, সংবিধানের কোনাে অনুচ্ছেদের বিস্তারিত বিবরণের জন্য সংবিধানে তফসিল (Schedule) যুক্ত করা হয়।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের সংবিধানে তফসিলের সংখ্যা কয়টি?
উঃ ৭টি।
( ২০১১ সালের পূর্বে বাংলাদেশের সংবিধানের তফসিলের সংখ্যা ছিল ৪টি। ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশােধনীর মাধ্যমে নতুন করে ৩টি তফসিল যুক্ত করা হয়)
প্রশ্ন: বাংলাদেশের সংবিধানে তফসিলগুলাে কী কী?
উঃ সংবিধানের ৭টি তফসিল নিচে দেয়া হলাে
১। প্রথম তফসিল:
অন্যান্য বিধান সত্ত্বেও কার্যকর আইন ( অর্থাৎ, দেশে যে বিধানই থাকুক না কেন, এই তফসিলে বর্ণিত আইনগুলাে অন্যান্য বিধান থাকা সত্ত্বেও কার্যকর হবে। এই তফসিলে সংবিধানের ৪৭ নং অনুচ্ছেদের বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে)।
২। দ্বিতীয় তফসিল:
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সংবিধানের চতুর্থ সংশােধন আইন, ১৯৭৫ এর ৩০ নং ধারাবলে দ্বিতীয় তফসিল বিলুপ্ত ( অর্থাৎ, দ্বিতীয় তফসিল এখন আর কার্যকর নেই)।
৩। তৃতীয় তফসিল:
শপথ ও ঘােষণা। (অর্থাৎ সংবিধানিক বিভিন্ন পদে কে কীভাবে শপথ নিবে, কে কাকে শপথ পড়াবেন এর বিধান বর্ণিত আছে। এই তফসিলে সংবিধানের ১৪৮ নং অনুচ্ছেদের বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে)
৪। চতুর্থ তফসিল:
ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলি
( অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং এই সময়ের মাঝে বাংলাদেশের নতুন সংবিধান প্রণয়ন ও কার্যকর করার আগ পর্যন্ত সময়কালকে বাংলাদেশের সংবিধানে ক্রান্তিকাল বলে অভিহিত করা হয়েছে। তাই এই ক্রান্তিকালীন সময়ে বাংলাদেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রণীত ও গৃহীত এবং বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার কর্তৃক প্রণীত ও গৃহীত আইন ও বিধানের বৈধ্যতা প্রদান করা হয়েছে। চতুর্থ তফসিলের মাধ্যমে সংবিধানের ১৫০(১) নং অনুচ্ছেদের বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে)
৫। পঞ্চম তফসিল:
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তারিখে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণ।
( এই তফসিলে সংবিধানের ১৫০(২) নং অনুচ্ছেদের বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করা হয়েছে)
৬। ষষ্ঠ তফসিল:
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘােষণা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্য রাত শেষে অর্থাৎ, ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত স্বাধীনতার ঘােষণা।
( এই তফসিলে সংবিধানের ১৫০(২) নং অনুচ্ছেদের বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করা হয়েছে)
৭। সপ্তম তফসিল:
১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল তারিখে মুজিবনগর সরকারের জারিকৃত স্বাধীনতার ঘােষণাপত্র।
( এই তফসিলে সংবিধানের ১৫০(২) নং অনুচ্ছেদের বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করা হয়েছে)
( সংবিধানের শেষের ৩টি তফসিল বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর এই তফসিলগুলাে তারিখের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে মনে রাখা যায়।
যেমন- পঞ্চম তফসিলে ৭-ই মার্চের ভাষণ,
ষষ্ঠ তফসিলে ২৬ মার্চে স্বাধীনতার ঘােষণা এবং
সপ্তম তফসিলে ১০ এপ্রিল তারিখে মুজিবনগর সরকারের জারিকৃত স্বাধীনতার ঘােষণাপত্র। তার মানে, বঙ্গবন্ধু আগে ৭ই মার্চের ভাষণ দিয়েছেন, তারপর ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘােষণা দিয়েছেন এবং এরপর ১০ এপ্রিলে মুজিবনগর সরকার গঠিত হয় এবং স্বাধীনতার ঘােষণাপত্র জারি করে। এখানে আরাে লক্ষণীয় যে, শেষের এই ৩টি তফসিলে কেবল সংবিধানের ১৫০(২) নং অনুচ্ছেদের বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করা হয়েছে এবং এগুলাে কেবল মুক্তিযুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত। আরাে খেয়াল করুন- বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘােষণা এর উল্লেখ আছে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘােষণাপত্র’ এর উল্লেখ আছে সংবিধানের সপ্তম তফসিলে। একটি হলাে স্বাধীনতার ঘােষণা, অন্যটি হলাে ‘স্বাধীনতার ঘােষণাপত্র’ ।)