ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা; ভারতের রাজধানী দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে পড়েছে লাখ লাখ পঙ্গপাল। দিল্লি ঘেঁষা গুরুগ্রামের ওপর দিয়ে পঙ্গপালের দলটি শনিবার উড়ে যায়।
মাসখানেক আগে পশ্চিম ও মধ্য ভারতে উপদ্রব দেখা দিয়েছিল পঙ্গপালের। এবার ঝাঁকে ঝাঁকে পঙ্গপাল পৌঁছেছে উত্তর ভারতেও। রাজধানী দিল্লি সংলগ্ন গুরুগ্রামের আকাশ ছেয়ে গিয়েছে পঙ্গপালে। হরিয়ানার বিস্তীর্ণ অঞ্চলেও তাদের উপদ্রব বেড়েছে। তাদের হাত থকে বাঁচতে দরজা-জানালা বন্ধ করে এক রকমের গৃহবন্দি হয়ে রয়েছেন স্থানীয় মানুষ।
গুরুগ্রামের সাইবার হাব এলাকায় শুক্রবার বিকেল থেকেই পঙ্গপালের উপদ্রব শুরু হয়। তার জেরে স্থানীয় বাসিন্দাদের দরজা-জানালা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় জেলা প্রশাসন। থালা-বাসন বাজিয়ে পঙ্গপাল তাড়ানোর পরামর্শও দেওয়া হয়। কিন্তু রাত পেরিয়ে গেলেও মরু পতঙ্গের দল এলাকা ছেড়ে যায়নি। বরং এ দিন সকালে গোটা এলাকা পঙ্গপালে ছেয়ে যায়। আতঙ্কে দরজা-জানালা বন্ধ করে বাড়িতেই বসে থাকেন স্থানীয়রা। এমজি রোড, ইফকো চক, ডিএলএফ ফেজ আই-৪, ভিলেজ চক্করপুর, সিকন্দরপুর, সুখরালির মতো গুরুগ্রামের ব্যস্ত এলাকাতেও এ দিন পঙ্গপাল হানা দেয়।
ভারতের কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রণালয়ে পঙ্গপাল সতর্কীকরণ বিভাগের কর্মকর্তা মহেন্দ্র লাল গুজ্জর জানান, শুক্রবার রাজস্থানের ঝুনঝুনুর কাছে পঙ্গপালের একটি ঝাঁককে দেখতে পেয়ে সক্রিয় হয় সেখানকার কন্ট্রোল টিমটি। কীটনাশক ছড়িয়ে বহু পঙ্গপালকে মারাও হয়। বাকি দলটি তখন হরিয়ানার রেওয়ারির দিকে উড়ে যায়। পথে তারা তিনটি অংশে ভাগ হয়ে যায়। একটি যায় গুরুগ্রামের দিকে, একটি হরিয়ানার ফরিদাবাদের দিকে এবং শেষ দলটি যায় দিল্লির দ্বারকা অভিমুখে।
ভারতের মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, রাজস্থান, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ ও হরিয়ানায় পঙ্গপালের হানায় ফসল নষ্ট হয়েছে। এ নিয়ে ভারতের রাজধানীতে হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। দমকল বাহিনীদেরকে পঙ্গপালের দমনের জন্য মাঠে নামানো হয়েছে । পঙ্গপাল রাতে গাছে বিশ্রাম করে। তাই রাতেই কীটনাশক ছড়িয়ে পঙ্গপাল মারার কাজ চালানো হবে বলে দিল্লির রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
পঙ্গপাল কী?
বিভিন্ন দেশের কৃষি বিভাগ এবং উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের কাছে ইংরেজি লোকাস্ট নামে পরিচিত এই পঙ্গপাল। বাংলায় এর নাম পতঙ্গ, এটি এক জাতের ঘাসফড়িঙ। স্বভাবে কিছুটা লাজুক প্রকৃতির ইঞ্চি খানেক দৈর্ঘ্যের এই পতঙ্গ, খাবারের জন্য নিজ প্রজাতির বিপুল সংখ্যক সদস্যের সঙ্গে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বেড়ায়। সাধারণত একেক ঝাঁকে কয়েক লাখ থেকে এক হাজার কোটি পতঙ্গ থাকতে পারে। তখন একে পঙ্গপাল বলে।
কেন বিপজ্জনক?
পঙ্গপাল যখন ফসলের ক্ষেতে আক্রমণ করে, তখন তা একজন কৃষকের জন্য রীতিমত দুঃস্বপ্নের বিষয় হয়ে ওঠে।কটি পূর্ণ বয়স্ক পঙ্গপাল প্রতিদিন তার ওজনের সমপরিমাণ খাদ্য খেতে পারে। যে অঞ্চলে তারা আক্রমণ করে, সেখানে খাদ্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা অন্য অঞ্চলে যায় না। উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের মতে একা থাকলে পতঙ্গ বেশ নিরীহ প্রাণী, কিন্তু দলবদ্ধ অবস্থায় এরা হয়ে ওঠে বিধ্বংসী। জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন ফাও বলছে, এক বর্গকিলোমিটার আকারের পঙ্গপাল এক সঙ্গে যে খাবার খায় তা দিয়ে ৩৫ হাজার মানুষকে এক বছর খাওয়ানো সম্ভব।
একটি বড় পঙ্গপাল দিনে ১২০ মাইল পর্যন্ত জমির ফসল খেয়ে ফেলতে পারে। কেবল খাবারই খায় না তারা, একই সঙ্গে প্রজননের কাজটিও করে। গত বছরের শেষ দিকে আফ্রিকার সোমালিয়া, ইথিওপিয়া এবং কেনিয়াসহ কয়েকটি দেশে কৃষি ক্ষেতে আক্রমণ চালাচ্ছে পঙ্গপাল, যে কারণে সেসব দেশের কৃষকেরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। তবে ঐ অঞ্চলে পঙ্গপালের আক্রমণ নিয়মিত বিরতিতে হয়ে থাকে। জাতিসংঘের হিসাবে পশ্চিম আফ্রিকায় ২০০৩-০৫ সাল পর্যন্ত সময়ে ২৫০ কোটি মার্কিন ডলার সমমূল্যের ফসলের ক্ষতি করে পঙ্গপাল।
আমাদের বাণী ডট কম/২৮ জুন ২০২০/পিপিএম