আমাদের বাণী ডেস্ক, ঢাকা; ফসলের যম পঙ্গপাল! করোনা ও আমফান বিপর্যয়ের মধ্যে ভারতের খাদ্য সুরক্ষা ব্যবস্থাকে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে ফেলে দেশটিতে প্রবেশ করেছে পঙ্গপালের দল। ভারতের মধ্যপ্রদেশে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ছে এই পতঙ্গের দল। গত ২৭ বছরের মধ্যে সেই রাজ্যের বৃহত্তম পঙ্গপালের আক্রমণ হতে চলেছে এটি এবং বর্ষা না আসা পর্যন্ত এই সংকট বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
রাজস্থানের বেশ কয়েকটি জায়গায় সবজি এবং ফসল ও গাছ ধ্বংস করার পরে মরুভূমির পঙ্গপালগুলি মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহের নির্বাচনী এলাকা বুধনিতে প্রবেশ করেছে। পঙ্গপাল রাজ্যের নিমুচ জেলা দিয়ে প্রবেশ করেছে, পরে মালওয়া নিমারের কিছু অংশ পাড়ি দিয়ে এখন ভোপালের কাছে রয়েছে এই ঝাঁক।
রাজ্য কৃষি বিভাগ ক্ষতিগ্রস্থ জেলাগুলির কৃষকদের পঙ্গপালের উপর ক্রমাগত নজরদারি রাখতে একটি নির্দেশিকা জারি করেছে। ঢোলের মাধ্যমে জোরালো শব্দ ব্যবহার করে, থালা-বাটি বাজিয়ে এবং চিৎকার চেঁচামেচি করে কীটপতঙ্গগুলিকে দূরে রাখতে বলা হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে পঙ্গপালের দল বিশ্রামের জন্য যে কোনও জায়গায় থামতে পারে। কৃষকদের সতর্ক থাকতে এবং পতঙ্গদের চলাচল পর্যবেক্ষণ করতে বলেছেন কর্মকর্তারা।
রাজ্যের কৃষি বিকাশের দলগুলি ছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকারের চারটি দল ট্র্যাক্টর এবং দমকলের গাড়ির সহায়তায় রাসায়নিক স্প্রে ব্যবহার করে পঙ্গপালের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে খুব শীঘ্রই পঙ্গপালদের নিয়ন্ত্রণ না করা হলে তারা প্রায় ৮,০০০ কোটি টাকার স্থায়ী মুগ ডালের ফসল নষ্ট করতে পারে। পঙ্গপাল ফল এবং শাকসব্জির নার্সারিগুলিকেও ক্ষতিগ্রস্থ করবে। তারা জানান, পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে এবং দীর্ঘ দূরত্ব পাড়ি দিয়ে ফেললে কয়েক হাজার কোটি টাকার তুলা ও মরিচ ফসলের ক্ষতিও হতে পারে।
রাজস্থান থেকে উত্তর প্রদেশে পঙ্গপালের দল ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের ব্যাপক ফসল ও চারণভূমি মারাত্মক ক্ষতির মুখে। সূত্র; এনডিটিভি
পঙ্গপাল কী?
বিভিন্ন দেশের কৃষি বিভাগ এবং উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের কাছে ইংরেজি লোকাস্ট নামে পরিচিত এই পঙ্গপাল। বাংলায় এর নাম পতঙ্গ, এটি এক জাতের ঘাসফড়িঙ। স্বভাবে কিছুটা লাজুক প্রকৃতির ইঞ্চি খানেক দৈর্ঘ্যের এই পতঙ্গ, খাবারের জন্য নিজ প্রজাতির বিপুল সংখ্যক সদস্যের সঙ্গে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বেড়ায়। সাধারণত একেক ঝাঁকে কয়েক লাখ থেকে এক হাজার কোটি পতঙ্গ থাকতে পারে। তখন একে পঙ্গপাল বলে।
কেন বিপজ্জনক?
পঙ্গপাল যখন ফসলের ক্ষেতে আক্রমণ করে, তখন তা একজন কৃষকের জন্য রীতিমত দুঃস্বপ্নের বিষয় হয়ে ওঠে।কটি পূর্ণ বয়স্ক পঙ্গপাল প্রতিদিন তার ওজনের সমপরিমাণ খাদ্য খেতে পারে। যে অঞ্চলে তারা আক্রমণ করে, সেখানে খাদ্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা অন্য অঞ্চলে যায় না। উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের মতে একা থাকলে পতঙ্গ বেশ নিরীহ প্রাণী, কিন্তু দলবদ্ধ অবস্থায় এরা হয়ে ওঠে বিধ্বংসী। জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন ফাও বলছে, এক বর্গকিলোমিটার আকারের পঙ্গপাল এক সঙ্গে যে খাবার খায় তা দিয়ে ৩৫ হাজার মানুষকে এক বছর খাওয়ানো সম্ভব।
একটি বড় পঙ্গপাল দিনে ১২০ মাইল পর্যন্ত জমির ফসল খেয়ে ফেলতে পারে। কেবল খাবারই খায় না তারা, একই সঙ্গে প্রজননের কাজটিও করে। গত বছরের শেষ দিকে আফ্রিকার সোমালিয়া, ইথিওপিয়া এবং কেনিয়াসহ কয়েকটি দেশে কৃষি ক্ষেতে আক্রমণ চালাচ্ছে পঙ্গপাল, যে কারণে সেসব দেশের কৃষকেরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। তবে ঐ অঞ্চলে পঙ্গপালের আক্রমণ নিয়মিত বিরতিতে হয়ে থাকে। জাতিসংঘের হিসাবে পশ্চিম আফ্রিকায় ২০০৩-০৫ সাল পর্যন্ত সময়ে ২৫০ কোটি মার্কিন ডলার সমমূল্যের ফসলের ক্ষতি করে পঙ্গপাল।