প্রতিবাদ করতে হলে প্রথমেই করুন, রুখে দাঁড়াতে হলে আগেই রুখে দাঁড়ান, এভাবেই সাম্প্রতিক নাগরিকত্ব ইস্যুতে গতকাল ভারতের জনগণের প্রতি বার্তা দিতে দেখা গেল প্রথিতযশা লেখিকা অরুন্ধতী রায়কে। সেই সাথে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনে (এনপিআর) সরকারি কর্মকর্তারা বাড়িতে গেলে তাদের ভুল তথ্য দিতে লোকজনকে আহ্বান জানান তিনি।
তবে এর ফল হলো উল্টো। দেশের মানুষকে সরকারি কাজে সহায়তার না করতে উস্কে দেয়ার অভিযোগে অরুন্ধতীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।
অভিযোগে অ্যাডভোকেট রাজিব কুমার রঞ্জন বলেন, তার এই বিবৃতি মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিকে ক্ষুব্ধ করে তোলার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত ও বিদ্বেষপূর্ণ কার্যক্রম ছাড়া কিছু না।
ভারতীয় ফৌজদারি বিধিমালা ও নিরাপত্তা আইনের অধীন বিভিন্ন ধারায় দিল্লির তিলাক মার্গ পুলিশ স্টেশনে অরুন্ধতী রায়ের বিরুদ্ধে এই মামলাটি করা হয়েছে।
ওই আইনজীবী বলেন, তিনি যাতে এমন মন্তব্য আর না করেন, সেই শিক্ষা দিতে এই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে তদন্ত ও শাস্তি দাবি করছি।
এদিকে ভারতীয় নাগরিক সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবারেও হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছেন। এর একদিন আগে উগ্র হিন্দুতরা ঘোড়া, ঢোল ও লাঠিসোটা নিয়ে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করেছেন।
দুই সপ্তাহ আগে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভে পুলিশের নৃশংসতায় এখন পর্যন্ত ২৭ জন নিহত হয়েছেন। ২০১৪ সালে বিপুল ভোটে ক্ষমতায় আসার পর হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সামনে এত বড় চ্যালেঞ্জ আর আসেনি।
লেখিকা ও মানবাধিকারকর্মী অরুন্ধতী রায়ের সমলোচনা করেছে দেশটির ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী বিজেপি ও বিরোধী দল কংগ্রেস।
সরকারি কর্মকর্তারা যখন নাগরিক তথ্য নিতে বাড়িতে বাড়িতে যাবেন, তখন ভুল নাম ও ঠিকানা দিতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন বুকারজয়ী এ লেখিকা। মূলত প্রতীকী প্রতিবাদের অংশ হিসেবেই তিনি এই আহ্বান জানিয়েছিলেন।-খবর ইন্ডিয়া টুডের
কংগ্রেসের গণমাধ্যম শাখার সদস্য শামা মোহাম্মদ বলেন, এটি কী ধরনের বাজে কথা! এনপিআরে অংশগ্রহণ না করতে লোকজনকে আহ্বান জানানো একটি বিষয়, কিন্তু তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে– তাদের ভুল তথ্য দিতে অনুরোধ জানানো। লোকজন কেন ভাবে যে তারাই সঠিক পথে রয়েছে।
এক টুইটবার্তায় তিনি বলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অসম্মান করেছেন, এমন কারও অযাচিত উপদেশ আমাদের দরকার নেই।
অরুন্ধতী রায় বলেন, নাগরিকপঞ্জি দেশের মুসলমানদের বিরুদ্ধে। কাজেই যারা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে আদমশুমারি কিংবা এনপিআর করবেন, পরেই সেই তথ্য এনআরসিতেই কাজে লাগানো হবে। কাজেই এই এনপিআরের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করতে হবে।
তিনি বলেন, যখন তারা বাড়িতে গিয়ে আপনার নাম জিজ্ঞাসা করবেন, তাদের রাঙ্গা-বিল্লা কিংবা কুংফু-কুত্তার মতো ভুল নাম দেবেন, যখন তারা ঠিকানা জিজ্ঞাসা করবেন, তখন সেভেন রেস কোর্স রোডের (প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন) ঠিকানা দেবেন। আমাদের ব্যাপক প্রতিরোধ দরকার।
তার এই বক্তব্যের সমালোচনা করে বিজেপি নেতা উমা ভারতী কয়েক দফা টুইটার পোস্টে বলেন, রাঙ্গা-বিল্লা নামের দুজন কুখ্যাত অপরাধী ছিলেন। সত্তরের দশকে তারা খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন। একটি শিশুকে ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যা ও তার ভাইকে হত্যার মতো নৃশংসতা চালিয়েছিলেন তারা।
তিনি বলেন, এনপিআর নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অরুন্ধতীর মনে পড়ল সেই সন্ত্রাসীদের কথা। কিন্তু আশফাকুল্লাহ খান কিংবা রামপ্রসাদ বিসমালের মতো মহান ব্যক্তিদের কথা স্মরণে এলো না।
‘কাজেই রাঙ্গা-বিল্লাকে আদর্শায়িত করে এমন একজন নারীর নাম মুখে নিতে আমার লজ্জা হয়। তার দৃষ্টিভঙ্গি কেবল নারীবিদ্বেষীই নয়– মানবতাবিরোধী। তিনি এক বিরক্তিকর মানসিকতার প্রদর্শন করেছেন,’ বললেন উমা।
মধ্যপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শিভরাজ সিং চৌহান বলেন, আমাদের দেশে যদি এমন ধরনের বুদ্ধিজীবী থাকেন, তবে সবার আগে তাদের নিবন্ধন দরকার। অরুন্ধতীর উচিত তার বক্তব্যের জন্য লজ্জিত হওয়া। এমন বিবৃতি কি আমাদের দেশের সঙ্গে প্রতারণার শামিল নয়?